এলোমেলো আমি-১১
এলোমেলো আমি-১১
সে যাই হোক, যেটা বলার তা হলো আমি সহানুভূতি পাবার জন্য লিখছি না. কাউকে দোষারোপ করছি না. আমার প্রতিদিন সকালে উঠে যা মনে হচ্ছে তা লিখে রাখছি. আমার নিজেরই যেমন মনে হচ্ছিল আমি পরস্পর বিরোধী কথা বলছি হয়ত. অনেকে ভাববেন আমি নিজের এই দশা নিয়ে খুব অবসাদে পড়ে আছি. তা ঠিক না. আসলে মানুষের মন নানা ভাবে ভ্রমন করে তো. আমার মন যেভাবে ভ্রমন করছে আমি সেভাবেই লিখছি. কিছু প্রশ্ন করছি, যে প্রশ্নগুলো আমার মন করে.
কলেজ স্ট্রিট এর ভবানী দত্ত লেন থেকে একটি এগিয়ে গেলে মর্গ এর একটু পাশে একটা অসাধারণ দোকান আছে. গরুর কাবাব আর পরোটা. লেবুর রস ছড়িয়ে দেয় ওরা. কী যে অসাধারণ খেতে লাগে যে বলার না.
একবার মনে আছে আমি অলিপাব থেকে বেরিয়ে সোজা এসেছিলাম আমার বন্ধুদের সঙ্গে এই দোকানটায়. অনেক রাত হয়ে গেছিল.
আচ্ছা শরত আর হেমন্তর মধ্যে বিকেল বেলাটাতে মিল আছে. ঝুপ করে শেষ হয়ে যাওয়ার মিল.
আমি এ সময়ে অন্য একটা গন্ধ পাই.
পুজোর সময়ে কোনো কালে আমি কলকাতাতে থাকতাম না.
পাহাড়ে বেড়িয়ে পরতাম.
সেই সব বেড়ানো গুলো টানছে আমায়.
আমি আজ সকাল থেকে কোনো কথা বলিনি. এই না কথা বলাগুলোকে আমি বেশ ভালবাসি.
আমার সঙ্গে আমি নিজে কতদিন কথা বলিনা!
আগে একবার হয়েছিল কি, আমি নিজের মনে কথা বলছিলাম. আমার কবিতা লেখার আগে কবিতাটা আমার মাথায় তৈরী হয়. আমি নিজের মনে এডিট করি, লিখি. নিজের ঘোরের মধ্যে থাকি. তো আমাকে ঘরের বাইরে থেকে আমার অজান্তে লক্ষ্য করছিলেন আমার মা. কিছুক্ষণ পর আমার মা আমার কাছে এসে বললেন তুই কি পাগল হয়ে যাচ্ছিস নাকি?
সাইকোলজিস্ট-ও আমাকে বলেছিলেন আমার মধ্যে স্প্লিট পার্সোনালিটি আছে. আমার আরেকটা সত্তা আছে, যাকে মারতে হবে!
আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম. তাকে মারতে হবে কি রে! সে আছে বলেই তো আমি লিখতে পারি.
কিন্তু কে শুনবে তার কথা!
এমন একটা ওষুধ দিলেন যে তার পড়ে আমার সে সত্তা দূরে থাক, আমার এই সত্তায় বিপন্ন হয়ে পড়ল.
আমি টানা তিনদিন বিছানা থেকে উঠতে পারিনি.
তবে তার লাভ হয়েছিল.
আমি লিখে ফেলেছিলাম আবার হেমন্তকাল কাব্যগ্রন্থের সব কোটি কবিতা.
চার বছর পর. চার বছর কিছু লিখিনি.
শুনেছিলাম আমি নাকি ঘোরের মধ্যে ভুল ভাল বলতাম আর আমার পাশে রাখা খাতে লিখতাম. আমি যে কখন লিখেছি মনে করতেও পারি না. পড়ে কবিতা গুলো দেখে আবার এডিট করি.
কিন্তু একটি কাব্যগ্রন্থ আমি কিছু এডিট করিনি.
ভয়ংকর জন্ডিস হয়েছিল. তার উপর প্রচন্ড জ্বর.
এবং সে কদিন আমার বাড়িতেও কেউ ছিল না.
আমি টানা তিনদিন জল ছাড়া কিছু খাইনি.
লিখে গেছি.
টানা ৭০টি কবিতা.
মায়েরা বেড়াতে গিয়েছিল.
কেউ ছিল না.
অফিস থেকেও ছুটি নিয়েছিলাম.
প্রায় ৪ ডিগ্রির উপর জ্বর ছিল. নেতিয়ে পড়ে ছিলাম. আর লিখে গেছিলাম. সেই কবিতাগুলো নিই তৈরী হয় একটি পান্ডুলিপি. আর তার নাম তারামনির হার.
আমি একটা বিষয় লক্ষকরেছি যে আমার গদ্যগুলো আমাকে সাহায্য করে নিজেকে মুক্ত করতে.
এবং নিজের ভাবনাগুলোকে গেঁথে ফেলতে.
কিন্তু এলোমেলো ভাবে এই সব লেখার মধ্যে কি আছে কোনো ভাবনার রসদ না কি কেবলি কাঁদুনি?
দয়া করে কেউ ভাববেন না আমি কাঁদুনি গাইছি.
আমি আসলে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করছি.
একবার মন্দারমণিতে দুটো দৃশ্য দেখেছিলাম একই সঙ্গে. দুজন লোক ভয়ংকর জোয়ার-এ ভেসে যাচ্ছিল.
যে লোকটা দূরে ছিল সে ফিরে এলো.
যে কাছে ছিল সে কোথায় ভেসে চলে গেল.
কে জানে আমি ফিরছি,না ভেসে যাচ্ছি কি না!
সমুদ্র জানে. সময় জানে.
আমার এই এত আক্ষেপ কেন যে!
যেন গল্পে ছিল জেন প্রাপ্তির আগে একটি লোক কাঠ কাটছিল এবং জেন প্রাপ্তির পরেও সে লোকটা কাঠ-ই কাটছিল.
প্রথমবারের কাঠ কতটা হলো প্রত্যাশা সহ.
দ্বিতীয় বারের কাঠ কতটা হলো নিশ্চেষ্টতার সঙ্গে.
কর্ম তখন অ-কর্ম.
মৃত্যুও তো এক ধরনের জন্ম ? তাই না?
(ক্রমশ)
আপনার লিখার ভিতর কোথাও যেন একটা সরলতা আছে। সেই সাদা মাটা সরলতাটাই প্রচন্ড রকম আকর্ষন করে আমাকে।
ReplyDeleteতুই এই লেখা গুলো ব্লগ ছাড়াও কথাও লেখার ব্যবস্তা কর.আর একটা জিনিস,হই তো তুই অসাম্ভাভ দ্রুততায় লিখে যাচ্ছিস. ফিরে লেখার দরকার আছে
ReplyDelete