শাহবাগ : উপমহাদেশের গণতন্ত্রের দূত


শাহবাগ : উপমহাদেশের গণতন্ত্রের দূত

যত দিন যাচ্ছে বিশ্বাস ফিরে আসছে আবার। কিসের বিশ্বাস? দিনবদলের বিশ্বাস। এমন একটা সমাজের স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাস, যার জন্য আমরা অপেক্ষা করে আছি অনেকদিন। অপেক্ষা করে আছি ৬৫ বছর ধরে এই উপমহাদেশে। অপেক্ষা করে আছি গণতন্ত্র নামক বসন্তের জন্য। কি বলছেন? আমাদের ভারতবর্ষে অনেকদিন আগেই গণতন্ত্র এসেছে? দু:খের বিষয় এ দেশে বসবাস করেও গণতন্ত্র মানে এখানে শুধুই ভোটের রাজনীতি। দলতন্ত্রের আস্ফালন। না। এ দেশে গণতন্ত্র এসেছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আমাদের শেখানো হচ্ছে এ দেশ সবার দেশ। কিন্তু চেয়ে দেখুন এখানে কি সত্যি গণতন্ত্র আছে? না কি সবই আমাদের চোখে ঠুলি পরিয়ে রাখা? যাতে এ রাষ্ট্রের প্রতি আমরা কোনদিনই বিশ্বাস ভঙ্গ না করি। যাতে ভোটে জিতিয়ে আনি কিছু দলকে, যারা ক্ষমতা পাওয়ার লোভে ব্যবহার করে সম্প্রদায়িকতাকেও? সত্যিকারের গণতন্ত্র এলে আমরা কি পারতাম না সমস্ত রকম আধা সামন্ততান্ত্রিক অবশেষ গুলো থেকে নিজেদের মুক্ত করতে? কিন্তু আমরা পারিনি। সেই তেভেগা তেলেঙ্গানা আন্দোলন থেকে গণ জাগরণ গুলিতে নেতৃত্ব দিয়েছে আমাদের তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলো। বামপন্থীদের বামপন্থী বলতেও লজ্জা হয়। তারা বামপন্থী নয়। আবার তাদের তথাকথিত বিপক্ষ দলগুলো পরিবর্তনের নাম নৈরাজ্য তৈরী করা ছাড়া কিছুই করে না। স্বাধীনতা লাভ আমরা করেছি। কিন্তু বিনিময় প্রথায়। তার বদলে আমরা পেয়েছি দেশ বিভাজন। দ্বিজাতিতত্ব। সাম্প্রদায়িকতা। দেশে দেশে যুদ্ধ। শত্রুতা। আমরা বিশ্বাস করেছি পাকিস্তান আমাদের শত্রু, বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়।
অথছ হায়! আমাদের এই ভুল ধারণা ভাঙবে কবে? ব্রিটিশদের শিখিয়ে দেওয়া দ্বিজাতিতত্বে আমরা ডুবে আছি এখনো। আর এ কথা বলতে আমরা বাধ্য যে এ দেশে কেন এই উপমহাদেশেই এখনো পর্যন্ত গণতন্ত্র আসেনি। কারণ স্বাধীনতা বা তথাকথিত শাসনের অধিকার পাওয়াই গণতন্ত্র না। গণতন্ত্র পেতে গেলে আমাদের মধ্যে থাকা ঔপনিবেশিক এবং সামানাতান্ত্রিক অবশেষ গুলিকেও আমাদের পরিহার করতে হবে। তা না হলে আমরা দেশের সীমান্ত পাব মাত্র। নাগরিকত্ব পাব হয়ত। কিন্তু গণতন্ত্র পাব না। তথাকথিত 'রাজনীতি'-এর আঙ্গিনা থেকে বেরিয়ে গিয়ে আমরা পারব না গণতন্ত্রের দিগন্তে চোখ মেলে তাকাতে।
ঠিক এই হতাশাজনক নির্বাসনে যখন আমরা ডুবে ছিলাম তখন আমাদের পথ দেখালো বাংলাদেশ। ৭১ সালে আমি দেখিনি মুক্তিযুদ্ধ। দেখিনি পঞ্চাশের দশকে বাংলা ভাষার জন্য লড়াই। কিন্তু এই ২০১৩ সালে এসে দেখলাম কী ভাবে ভুবনায়নের বেড়াজালের থেকে বেরিয়েও বাং;লাদেশ বিদ্রোহ করে উঠলো। আমাদের তথাকথিত স্বাধীন সেক্যুলার দেশ যা পারেনি, তা করে দেখছে বাংলাদেশ। এবং করা? বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম।
এখানে তরুণ প্রজন্ম কোথায় গেল? জানিনা তাদের খুঁজছি।
এখানে কোনো বুদ্ধিজীবী কেন কোনো কথা বলছেন না?
জানি না তাদের খুঁজছি।
এখানে কোনো সংবাদ মাধ্যমে এ বিষয়ে কেন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই?
জানি না তাদের খুঁজছি।
খুঁজছি এবং আবার স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্ন দেখছি গণতন্ত্র আসছে। এই বসন্তের পাতার ভিতর দিয়ে গণতন্ত্র আসছে। শাহবাগের প্রজন্ম চত্তরে মিলেমিশে থাকা বিপ্লবী বাঙালিদের মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্র কথা বলে উঠছে। আমাদের এই উপমহাদেশের সমস্ত অনুভূতিসম্পন্ন মানুষদের হৃদয়ের কথা নিয়ে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম কথা বলে উঠছে। এক সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশের জন্য তরুণ প্রজমের বাঙালিরা কথা বলছে। একজোট হয়ে। কোনো তথাকথিত রাজনৈতিক পতাকা বা আশ্রয় ছাড়াই।
আর কেনই বা তাদের লাগবে মরে যাওয়া হেজে যাওয়া বুদ্ধিজীবিদের সমর্থন? কেনই বা তাদের লাগবে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয়? রাষ্ট্রের প্রশ্রয়? তাদের আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই গড়ে উঠবে এক নতুন সমাজ ব্যবস্থা তাদের আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই গড়ে উঠবে এক নতুন স্বপ্ন। নিশ্চিত ভাবে ব্রিটিশ শাসন মুক্ত এই উপমহাদেশে যদি কথাও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই হয়ে থাকে তাহলে তা এই বাংলাদেশেই হচ্ছে এবং যদি কথাও গণতন্ত্র আসে ( তথাকথিত না, প্রকৃত)  তবে তা আসবে এই বাংলাদেশেই।
আর তার জন্য এই উপমহাদেশের আগামী প্রজন্ম চিরকৃতজ্ঞ থাকবে বাংলাদেশের তরুণ প্রজম্নের কাছে।
আমার কাছে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, দলতন্ত্র মুক্ত গণতন্ত্র আর স্বপ্ন না।
কারণ আমার বাংলাদেশ আছে।

Comments

  1. "আর তার জন্য এই উপমহাদেশের আগামী প্রজন্ম চিরকৃতজ্ঞ থাকবে বাংলাদেশের তরুণ প্রজম্নের কাছে।
    আমার কাছে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত, দলতন্ত্র মুক্ত গণতন্ত্র আর স্বপ্ন না।
    কারণ আমার বাংলাদেশ আছে।"

    অসাধারন আপনার লেখা। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete

Post a Comment