শাহবাগের প্রতি- খোলা চিঠি

শাহবাগের প্রতি- খোলা চিঠি 

বাংলাদেশ বাঙালি হিসেবে আমাকে গর্বিত করলো। সেই বাংলাদেশ, যেখানে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর দেশের মানুষ স্বাধীনতা পায়। সেই বাংলাদেশ, যেখানে ভাষার জন্য মানুষ প্রাণ দেয়। সেই বাংলাদেশ, যেখানে মৌলবাদীরা হেরে যায় মানুষের ভালবাসার কাছে। আর এই ভালবাসা, জাতিসত্তা এবং আত্মসম্মানবোধ বাঙালির মেরুদন্ডকে সোজা রাখে। শাহবাগের গণজাগরণ আবার ফিরিয়ে আনলো সেই দিন। ফিরিয়ে আনলো গর্জে ওঠার সাহস, অনুপ্রেরণা। আমি আমার প্রাণ মন দিয়ে সেই গণজাগরণের একজন অংশীদার। একজন বাঙালি হিসেবে বা একজন বামপন্থী মনোভাবাপন্ন মানুষ হিসেবেই শুধু না, একজন প্রেমিক হিসেবে, একজন সহযোদ্ধা হিসেবে আমি সীমানা মানিনা। আমি মানিনা বাংলাদেশ আমার দেশ নয়। আমি মানিনা সে দেশের নাগরিক শুধুই আমার প্রতিবেশী। আমি মনে করি এই গণআন্দোলনের প্রতিটি ভাই আমার কমরেড। এই কলকাতা শহরে নিজেদের বাঙালি বলে আর মনে হয় না। এখানে আমরা ঔপনিবেশিকতার ভারে আচ্ছন্ন। আমরা নিজদের শ্রদ্ধা করতে পারি না এখানে। যেকোনো গণ আন্দোলনের আগে এখানে মানুষ বিভাজিত হয়ে যায় আর নয়তো আত্মসমর্পণ করে ক্ষমতালোভী কোন না কোন রাজনৈতিক পার্টির কাছে। সেই জায়গায় দেখলাম শাহবাগে ভাষার জন্য, স্বাধীনতার জন্য, মানুষের আত্মসমর্পনকারী সত্তা জাগ্রত হয়ে উঠলো। তথাকথিত গণতন্ত্রের দেশ আমাদের এই ভারতবর্ষ। এখানে তবু রুশদী আসতে পারেন না। হায়! এর একটা কারণ আছে। আমরা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ করে পাইনি। বিনিময় প্রথায় পেয়েছি। দ্বিজাতিতত্ব আমাদের মজ্জায় মজ্জায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু আমি বিশ্বাস রাখি গণআন্দোলন আর গণঅভ্যুত্থান সীমানার বাধা মানবে না আর। এই আন্দোলনের পাশে আমরা আছি। কারণ এই আন্দোলন আমাদের প্রানের আন্দোলন, আমাদের মন খারাপের আন্দোলন, আমাদের জ্বলে ওঠার আন্দোলন, আমাদের ভাষার আন্দোলন, আমাদের বিবেকের আন্দোলন। এই আন্দোলন আমাদের সত্তার, আত্মবিশ্বাসের, সাহসের, মর্যাদার, আত্মসম্মানের। যদি পারতাম সীমানা ছাড়িয়ে ওই দেশে পৌছে যেতে, তাহলে মিশে যেতাম ওই আন্দোলনে। আর ফিরতাম-ই না এই দেশে। এ দেশে রোজ আমার ভাষাকে ধর্ষিত হতে দেখি, বাঙালি হিসেবে সত্তাকে মরে যেতে দেখি। গণআন্দোলনের যারে আমার ভায়েদের জানাই সংগ্রামী বন্ধুতা। আবার একটা স্বপ্ন হানা দিছে কয়েকদিন ধরে। দুই জার্মানি যদি এক হয়ে যেতে পারে, তবে দুই বাংলা কেন পারবে না?

রাজাকারদের শাস্তি দিক জনগণ। যেকোনো ধর্মের মৌলবাদ নিপাত যাক। তোমাদের আন্দোলন আমাদের আন্দোলন হয়ে উঠুক। আন্দোলনের কোনো দেশ কাল সীমার পার্থক্য নেই। তোমাদের আন্দোলন সারা বিশ্বকে পথ দেখাক। পথ দেখাক, কীভাবে জ্বলে উঠতে হয়!

ভালবাসা

হিন্দোল ভট্টাচার্য

Comments