এলোমেলো আমি-২৭
এলোমেলো আমি-২৭
ততক্ষণে সন্ধে হয়ে এসেছে প্রায়। আমি হাঁটছিলাম
কেদারের পথে। বিকেলে পৌঁছে গিয়েছিলাম গৌরীকুন্ডে।
সকালে উঠে সেই কেদার। সেই অসম্ভব সুন্দর জগত।
কিন্তু রামওয়ারাতে সেই অভিজ্ঞতা আমি কখনো ভুলব
কিন্তু আজ হঠাত মনে করে লিখলাম কেন? আমি
গতকাল রাতে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল আমার।
গতকাল সন্ধেবেলা অনির্বান এর সঙ্গেও আড্ডা হলো
মনির বইটা নিয়ে কথা হলো। পুজোর আগে বেরোনোর
কিন্তু আমি সেই ছয় বছর আগেকার অভিজ্ঞতাকে
মনটা একটু বিষন্ন অবস্থায় রয়েছে। শরীরও ভালো
বেশ কয়েক বছর কোনো কথা না বলে থাকতে ইচ্ছে
ওহো! আমার আরো একটা কবিতার বইয়ের পান্ডুলিপি
নির্জনতা, এস।
(ক্রমশ)
ততক্ষণে সন্ধে হয়ে এসেছে প্রায়। আমি হাঁটছিলাম
কেদারের পথে। বিকেলে পৌঁছে গিয়েছিলাম গৌরীকুন্ডে।
সেখান থেকে ৭ কিমি হেঁটে রামওয়ারা। ততক্ষণ পর্যন্ত
বেশ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি। সে নিয়ে আমার
দ্বিতীয়বার কেদার যাত্রা। প্রথমবার অনেকে মিলে
গেছিলাম। সেবার গেলাম একা। একা কেদার পাড়ি
দেওয়া নিয়ে বাড়িতে বেশ ঝামেলা হয়েছিল। কিন্তু
আমার মন চাইছিল গারোয়াল-এ হাঁটবো তো একাই।
অনেকের সঙ্গে মিলেও একা। আবার একা গেলেও
একা। তো কারোর না
শুনে হাঁটতে লাগলাম। রামওয়ারাতে যখন পৌছলাম
তখন চারদিক
থেকে একটা ভিজে অন্ধকার ঘিরে ধরছে আমাকে।
ওখানে ঠাই পেলাম বিরলা গেস্ট হাউস-এ। রাতে
যখন খাওয়া দাওয়ার পরে বাইরে এসে দাঁড়ালাম, তখন
চোখ পড়ল একটু
নীচে। দেখি একজন মানুষ পাথরের ওপর বসে আছেন।
বেশ খানিকটা নিচেই। আমি কৌতুহলী হয়ে নেমে
গেলাম। অন্ধকার। পাথর দেখতে পাচ্ছি না। তার উপর
একটু ভিজে
ভিজে ভাব। যাই হোক পিছলে গেলাম না। যত এগিয়ে
গেলাম, ততই স্পষ্ট হয়ে আসছিলেন যিনি বসে
ছিলেন তাঁর অবয়ব। আমি ক্রমে ক্রমে তার প্রায় কাছেই
হাজির হলাম।
সেখান থেকে মন্দাকিনী প্রায় হাতের কাছে। কুলুকুলু
স্রোত না। বেশ গর্জন। অন্ধকারে সেই গর্জন শুনে
মনে হয় কে যেন দেকে যাচ্ছেন। সেই অতল জলের
আহ্বান না শুনে
আমি এগিয়ে গেলাম সেই ভদ্রলোকের কাছে। এমন
একটা জায়গায় গেলাম যেখান থেকে হাত বাড়ালেই
সেই ভদ্রলোককে স্পর্শ করা যায়। কিন্তু কি আশ্চর্য তাঁর
কোনো সাড়া
শব্দ নেই। আমিও তাঁর পাশে প্রায় বসে পড়লাম।
তিনিও কোনো কথা বলছেন না। আমিও কিছু জিজ্ঞেস
করতে পারছি না। ক্রমে সেই চারিদিকের গন্ধ, আলো-
অন্ধকার
আমাকেও আনমনা করে দিল। নীচে জলের গর্জন
তখন বেশ সঙ্গীতের মত লাগছে। ঠান্ডা বেশ। কিন্তু
চারিদিকে ভয়ের লেশমাত্র নেই। যেন কেউ ঘিরে
রেখেছে আমাকে তখন।
কে যে ঘিরে রেখেছে তা জানি না। ঘোরতর নাস্তিক
আমি। ঈশ্বর ইত্যাদির কথা কখনো মনেও পড়েনি।
কিন্তু এই টুকু বুঝতে পারছিলাম আমি অন্য কোনো
এক অনুভুতিজগতের মধ্যে এসে পরেছি। ক্রমশ
বুঝতে পারলাম আমার কোনো জিজ্ঞাসা নেই। আমার
কোথাও যাবার কথাও নেই। মন খারাপ না। কান্না না।
ভয় না। অন্যরকম এক
অনুভূতির মধ্যে ডুবে গেছি তখন। আর আশ্চর্যের
ব্যাপার সেই ভদ্রলোক যেমন পাশে বসে থেকেও
আমার দিকে তাকালেন না পর্যন্ত, তেমন আমিও
ক্রমশ ভুলে গেলাম তার অস্তিত্ব। বেশ কিছুক্ষণ পর
যখন সম্বিত ফিরল দেখলাম তিনি নেই। হয়ত উঠে চলে
গাছেন। ঘড়িতে রাত দুটো। অসম্ভব ঠান্ডা। সেই
ভদ্রলোক কোথায় গেলেন?
জানি না।
দেখলাম উঠতে বেশ বেগ হলো।
সকালে উঠে সেই কেদার। সেই অসম্ভব সুন্দর জগত।
তার পর দিন বাসুকিতাল।
কিন্তু রামওয়ারাতে সেই অভিজ্ঞতা আমি কখনো ভুলব
না।
কিন্তু আজ হঠাত মনে করে লিখলাম কেন? আমি
গতকাল রাতে স্বপ্নে দেখেছি সেই ভদ্রলোকটিকে। সেই
মন্দাকিনীর জলের পাশে ঠান্ডা ভিজে কিছু একটা
আমাকে ঘিরে
ধরেছিল। আমি দেখলাম আমি আবার তার কাছে বসে
আছি সেই রাতে। শীতের বাতাস আমার মুখ চিরে
বেরিয়ে যাচ্ছে। আমার হুঁশ নেই। এদিকে আমার
প্রানের এক মানুষ
আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ঠিক মুখের সামনে কিন্তু
আমার কোনো হুঁশ নেই। আমিও পাথরের উপর
বসে আছি। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি জলের স্রোতের
অন্ধকারে।
গতকাল রাতে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল আমার।
গতকাল সন্ধেবেলা অনির্বান এর সঙ্গেও আড্ডা হলো
খুব। তার সিঙ্গালীলা ঠাকুর কাব্যগ্রন্থের অনেকগুলো
কবিতা শুনলাম। বইটি প্রকাশিত হবে। অনির্বানের বেশ
কিছু কবিতা মুখস্থই থাকে বলতে গেলে।স্বয়ং এক
পান্ডুলিপি। আমার অন্যতম এক প্রিয় বন্ধু।
মনির বইটা নিয়ে কথা হলো। পুজোর আগে বেরোনোর
নাকি কথা ছিল। কিন্তু বেরোলো না তো? মনি
বোধহয় হাল ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু বইটা বেরোনো
দরকার।
কিন্তু আমি সেই ছয় বছর আগেকার অভিজ্ঞতাকে
আবার কাল রাতে ফিরে পেলাম কেন?
মনটা একটু বিষন্ন অবস্থায় রয়েছে। শরীরও ভালো
নেই।
বেশ কয়েক বছর কোনো কথা না বলে থাকতে ইচ্ছে
করছে।
ওহো! আমার আরো একটা কবিতার বইয়ের পান্ডুলিপি
তৈরী। নাম দিয়েছি ব্যাক্তিগত নির্বাসন থেকে।
এই ব্যাক্তিগত বানানটা এই ফন্ট এ কিছুতেই আসে
না। ভারী বিপদ!
নির্জনতা, এস।
(ক্রমশ)
অসম্ভব ভাও লাগল। যতগুলো এলোমেলো কথা পড়েছি তার ভিতর এটা অন্যতম সেরা। আসাধারন। লিখটা পড়ে আমার ভিতরেও একধরনের নির্জনতা গ্রাস করেছে।
ReplyDelete