এলোমেলো আমি-২৯


এলোমেলো আমি-২৯

অনেকদিন কিছু লেখা হয়নি। বেশ কিছু কবিতা লেখা হলো হঠাতই। কবিতাগুলো কেমন হচ্ছে জানি না তবে নিজের ভিতরে সম্পূর্ণ অনন্য কিছুর স্বাদ পাচ্ছি। অন্য কিছু অনুভূতি আমার মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এই শীতের সকালগুলো আমাকে যেমন আচ্ছন্ন করে রাখে। এমন এক মনের অবস্থা, যা আমি কখনো বাক্যে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে পারব বলে মনে হয় না। আমি কি ক্রমশ বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি? এখন আর কারোর উপর আমার অভিমান হয় না। রাগ হয় না। কিন্তু একটা বিকেলের মত দু:খ আমার মনকে ঘিরে থাকে। তবে এ দু:খ ব্যেক্তিকেন্দ্রিক দু:খ না। এই যে দিনগুলো কেটে যাচ্ছে, ক্রমশ আমি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছি। কি অদ্ভুত এই নি:সঙ্গ যাত্রা! মানছি সব মানুষেরই প্রকৃত অভিযাত্রা একাকী। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। কিন্তু মায়া কেন আসছে? কেন মনে হচ্ছে আমি এই পৃথিবী ছেড়ে যে কেকদিনের মধ্যেই চলে যাব, আর তো দেখতে পাব না। তাহলে আমার বেঁচে থাকা প্রতিটি মুহূর্তই বেঁচে নেওয়া যাক। কিন্তু আমার সমস্যা হলো আমি তো সত্যি কবিতা লেখা ছাড়া আর কোনো ভাবে বেঁচে উঠতে পারি না। অথচ আমার লেখাগুলো সেই হিরক খন্ডের মত অনুভূতিগুলোকে আদৌ ধারণ করে কি? বারবার মনে হয় সফল হবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু ব্যর্থ হলেও বীরের মত ব্যর্থ হওয়া উচিত। 
চলে গেলেন পণ্ডিত রবিশংকর। আমি যখন আমার বাবার কাছে সেতার শিখতাম, তখন বাবা আমাকে তাঁর একটা আত্মজীবনী-সুলভ গ্রন্থ পড়তে দিয়েছিলেন। যেহেতু সেতার মোটামুটি বাজাতে পারতাম, তাই আর কিছু না পারি, সঙ্গীতের মধ্যে থাকতাম। যদিও আমার এই সত্তার কথা প্রায় কেউই জানেন না। 
জানাতে চাও না। কারণ সেতারের বাদক হবার চেষ্টা করেছি এক সময়ে, কিন্তু যখন বুঝলাম এ রাস্তা আমার জন্য নয় তখন কেবল হয়ে গেলাম মুগ্ধ শ্রোতা। 
আর বলা যেতে পারে, আমার এই মুগ্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পণ্ডিত রবিশংকর। 
অনেক সময়, যখন মন খুব ভারী থাকে, আমি তাঁর বাজনা শুনি। তাঁর  চলে যাওয়া আমার কাছে যে কি বেদনার।।।তার ছিঁড়ে চলে যাওয়া। 
ক্রমশ এবং ক্রমশ আমার মনে একটা ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে আমি এই সময়ের নই। আমি যে কাজটা করি, তা আমার করার কথা নয়। আমার হয়ত স্রেফ একজন পর্যটক হয়ে যাওয়া উচিত। আমার হয়ত সব্বাইকে , সব কিছু কে ভুলে গিয়ে হয়ে যাওয়া উচিত মৌন এক পর্যটক। আমার এই বয়সে  কেউই নিজেকে কখনই বৃদ্ধ ভাববে না, কিন্তু আমি এটুকু জানি, যে আমার বয়স বয়সের মত বেড়ে যায় না, কমেও যায়না। আমি অনেক বছর বেঁচে আছি মনে হয়। আমি জানি আমি ক্রমশ বিস্মৃত হব সকলের কাছ থেকে। কিন্তু এটাই আমার ভবিষ্যত। 
শুকনো পাতার মত আমি খসখসে হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ। 
কিন্তু সাহস পাচ্ছি না। 
যেদিন পাব সেই সাহস, সেদিন হয়ত নিজেকে আটকাতে পারব না। 
কিন্তু কি আমাকে আটকে  জীবনের প্রতি তীব্র ভালবাসা? প্রকৃতির প্রতি তীব্র মায়া? আরো কিছু লেখার জন্য লোভ? হয়ত কোনো দিন কিছু লিখতে পারব, লোকে আমার লেখা পর্বে এই ভেবে আশায় বসে থাকা? ভালবাসা পাবার স্বপ্ন? মুহুর্তগুলোকে চেখে নেবার প্রচন্ড আকাঙ্খা? আমি সত্যি কিছু জানি না। আমি বদ হয় জানতেও চাই না। আমি খন্জ্ছি এ কথাটা ঠিক। আমি খুঁজছি আমার প্রশ্নগুলোকে আমার ভিতরে থাকা অনেক না বলা কথাগুলোকে। 
আমার আর কারোর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। সবাই কেমন নিজের ব্যর্থতা সাফল্য গুলোকে নিয়ে ব্যবসা করতে চাইছে। বলতে চাইছে দেখো আমি এই। তার জন্য নানা পরিকল্পনা উদ্যোগ ও আরো কত কিছু!
তির্যক চাহনিতে ভরা এই পৃথিবীতে আমি আর পারছিনা। কার সঙ্গে কথা বলব? কেন বলব? মনের মানুষ কই ?
আমি অনেকদিন কোনো নদীর কাছে যাইনি। 
আমাকে নিয়ে যাবে কেউ? 
আমার অনেক কথা বলার আছে।
(ক্রমশ)

Comments

  1. Setar ki kono institution e shikhechhile?

    ReplyDelete
  2. বড় ভালো লিখেছিস রে ,এই সূদূর হাযদ্রাবাদ থেকেও তোকে স্পর্শ করতে পারি তোর্ এই লেখার মধ্য দিয়ে । ভালো থাক আর সৃজনশীল থাক ।

    ReplyDelete

Post a Comment