চিটফাঁদের দশচক্রে ভগবান ভূত!


চিটফাঁদের দশচক্রে ভগবান ভূত! 


চিটফাঁদে বাংলার অর্থনীতি যখন বিপন্ন তখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসে শাসকদলের ভূমিকা নিয়ে। বহুদিন ধরেই এই বাংলায় চিত ফান্ড গুলি বাংলার অর্থনীতিতে চোরাবালি তৈরী করছিল। তখন বর্তমান শাসকদলের কেউ ভাবেননি এরকম একটা পরিস্থিতি হতে পারে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কি কোনো অর্থনীতিবিদ নেই? না কি তিনিও একই ফাঁদে পা দিয়ে বিকিয়ে দিয়েছিলেন নিজেকে? 
আসলে বাংলা কেন সারা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক নেতাদের কারুর কিছু এসে যায় না। এসে যায়না সাধারণ মানুষের পেতে যদি বোমা পড়ে। যদি সাধারণ মানুষ সর্বস্ব উজার করেও তলিয়ে যায়, তখন এ রাজ্যেরই মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারেন যাক যা গেছে তা যাক! হায় আমার বঙ্গদেশ! আর হায় আমাদের পরিবর্তন! সুদীপ্ত সেন এর মত লোকেরা স্রেফ টাকা দিয়ে কিনে রাখে রাজনৈতিক পার্টি, প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, মন্ত্রী এমনকি সংবাদমাধ্যমকেও।
আমার সামান্য কিছু প্রশ্ন এখানে রাখতে বাধ্য হচ্ছি।
১) যখন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যান সারদা গ্রুপ এর আবাসনের উদ্বোধনে তখন তিনি বা তাঁরা জানতেন না সারদা গ্রুপ একটি চিত ফান্ড?
২) কুনাল ঘোষ কে এখন তাড়িয়েছে তৃণমূল কিন্তু একটা সময় তো তিনি-ই হয়ে উঠেছিলেন তৃণমূলের মুখপত্র। এই দুর্নীতি পরায়ন আসত লোকটি যখন মমতাভজনে ব্যাপৃত হয়ে চ্যানেল ১০, সকালবেলা, এমনকী প্রতিদিন ভরিয়ে রাখতেন ব্যাক্তিগত ভাবে আক্রমনের কলমে তখন তৃনমূল নেতৃত্ব জানত না, ইনি কে? কত টাকা উনি পান? কাদের কাছ থেকে পান? যে ব্যাক্তি নিজে অসংখ্য মানুষের মুখ থেকে অন্ন কেড়ে নিতে সহায়তা করছেন, তখন তিনি কথা বলেন কী ভাবে ? কী ভাবে তথাকথিত পরিবর্তনশীল সরকার সেই লোকটিকে রাজ্যসভার জন্য তদ্বির করে? আমার মনে আছে, একবার কুনাল ঘোষ চ্যানেল ১০-এ কভার করছিলেন মমতার ছবির প্রদর্শনী। কথা শুনে মনে হচ্ছিল কত বড় শিল্পবোদ্ধা ! এমনকী এ লোকটি গনেশ পাইন-কেও আক্রমন করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করেন নি। কবির সুমন কে আক্রমন করেছেন অত্যন্ত নিকৃষ্ট ভাষায়। কেউ কথা বলেননি। তৃনমূল নেতৃত্ব হাততালি দিছিলেন। বাহবা জানাচ্ছিলেন। হায় গণতন্ত্র!
৩) এক নি:শ্বাসে কতগুলো চিট ফান্ড আছে বলুন তো? সারদা, রোজভ্যালি, আইকোর, গ্রিন্ভ্যালি, ইউনিমাস, এরকম আরো বেশ কিছু নাম করা যায়। কয়েকদিন ধরে দেখছি তারা সবাই খবর কাগজে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে এই বলে যে তারা ধোয়া তুলসীপাতা। খবর কাগজগুলো কেন ছাপছে? এই সব বিজ্ঞাপন এক্ষুনি বন্ধ করা দরকার। এটাও তো একধরনের পাবলিসিটি।
৪) এমনকী ফ্রেন্ডস এফএম, প্রতিদিন সহ বহু কাগজের ব্র্যান্ড টিম এই সব চিট ফান্ডকে টাইটেল স্পন্সর করে নানা ইভেন্ট করেছে। সেগুলো সব সাংস্কৃতিক ব্যাপার স্যাপার। কেউ কিছু জানত না? তারা সবাই জানত যে এরা চিট ফান্ড। এদেরকে টাইটেল স্পন্সর করা মানে তো এদের বিজ্ঞাপন। এরা গ্রামের লোকেদের কাছে যায় আর এই সব ডকুমেন্ট দেখায় আর লোকেদের কাছ থেকে টাকা তোলে, তুলেছে। মুখ্যমন্ত্রী, শাসকদল, সরকার, সংবাদমাধ্যম, বিজ্ঞাপন এদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণপত্র। সেগুলো কেন যোগান দিয়েছে সংস্থাগুলো? বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো কেন এদের বিজ্ঞাপন করেছে? খবর কাগজে কেন এদের ইভেন্টগুলো নিয়ে ফটো ক্যাপশন সহ আডভার্টরিয়াল বেরিয়েছে ? কেউকিছু জানতেন না? না কি টাকা তাদের অন্ধ করে দিয়েছিল?
৫) যদি এত বড় বড় সংস্থাগুলো নিজেদের বিকিয়ে দিতে পারে চিট ফান্ড এর টাকার কাছে, তাহলে আর সাধারণ মানুষকে বোকা বলে লাভ কি? যদি সরকার প্রমাণ পত্র দেয় এদের, তাহলে তো সরকার চিট ফান্ড এর সহকারী ছাড়া আর কিছু নয়। যাঁরা এখন প্রতিবাদ করছেন, তাঁরাও তো তাহলে এই গ্রুপ গুলোর বেড়ে ওঠে সাহায্য করেছেন কোনো না কোনো ভাবে। তাঁরাও কি এতকাল ঘুমোচ্ছিলেন ?
৬) বাম সরকার কেন মূলেই এদের উত্খাত করতে পারেনি? এদের বাড় বাড়ন্ত যদি এখন হয়, তবে জন্ম তো বাম আমলে। বাম গোষ্ঠিগুলো কিটাকা খায়নি?
৭) আমরা কেন কর দিয়ে এই টাকা দেব? যে লোকটি এই চিট ফান্ডের বলি, তিনিও সিগারেট খেয়ে কর দেবেন? কেন? মাছের টেলি মাছ ভাজা কেন? শুনেছি বিভিন্ন চিট ফান্ড থেকে কয়েকশ কোটি টাকা করে প্রতিমাসে তৃনমূল ভবনে যায়, যেত। আর এখন এ হেন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুখ বন্ধ রাখার জন্য কত টাকা যে এরা সরকার, শাসকদল, প্রশাসনকে দিছে তার নেই ঠিক। দিক শাসকদল নিজেদের ফান্ড থেকে টাকা। অনেক চুরি করেছিস তো তরা। এবার টাকা দে। দেবে না। সেই জনগনের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। কেন মানব?
৮) গ্রাম গুলোতে ঘুরলে বোঝা যাবে এখন চিট ফান্ড গুলো কত গ্রামের মানুষের পেতে লাথি মেরেছে। পঞ্চায়েতে তো ছিল তৃনমূল। তারা কি করেছে? ঘুমছিল? না কি টাকা খেয়ে বসে ছিল? আর তারাই বা কি করবেন? যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী চিট ফান্ড এর আবাসন উদ্বোধন করতে যান, যখন, সভা আলোকিত করেন এই সরকারের মন্ত্রী, বিধায়ক, তখন এই সরকার তো াগ থেকে গোড়া দুর্নীতিদুষ্ট। আর বিপক্ষ দল ? তারাও ধোয়া তুলসীপাতা নয়। যদি এখন সিপিএম থাকত, তাহলে এই সুদীপ্ত সেন এর মত লোকেরা সিপিএম কে টাকা খাওয়াতো আর এখন সিপিএম নেই, তৃনমূল আছে, তাদের খাইয়েছে। এই তো আমাদের তথাকথিত গণতন্ত্র। এই তো আমাদের সংসদীয় অত্যাচার।

কিন্তু মানুষ কি আবার ভোট দেবে চোরেদের? হয় সিপিএম নয় তৃনমূল, নয় বিজেপি?

যাদের গেছে, যারা সহ্য করছেন, যারা সর্বস্ব খুইয়েছেন তারা কি ঘুরে দাঁড়াবেন না? শাসকের রাজদন্ড হাতে যেসমস্ত লোক বসে আছেন তাদের সরাসরি টেনে নামাবেন না?

আর কোথায় গেলেন আমাদের পরিবর্তনশীল বুদ্ধিজীবিরা? তারা কি টাকা আর পদ পেয়ে নিজেদের কলম, মুখে কন্ডোম পরে ফেলেছেন? হাতে না মেরে ভাতে মারাটাও কি গণহত্যা নয়? শাসকের প্রতি কি আবার লেখা হবে না? বুদ্ধিজীবিরা রাস্তায় নামবেন না? চেয়ার পেয়ে গেছেন। যা খুশি তাই করার, ফরমান দেবার, যাকে খুশি তাকে পুরস্কার দেবার, সম্মান দেবার, অসম্মান করার, ভয় দেখানোর, গোষ্ঠী বানানোর এবং টাকা কামানোর ফাঁকা মাঠে চড়ে বেড়াবেন পোষা "তৃণভোজী' হয়ে?

এর চেয়ে খারাপ সময়ে আমরা আগে পড়েছি কি না জানি না।

Comments